মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

২ মিনিট সময় দিন- বদলে যাবে আপনার জ্ঞানের জগৎ

মনটাকে কোন বিষয়ে স্থির করতে চাচ্ছেন কিন্তু পারছেন না। মন এক চিন্তা থেকে আরেক চিন্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। হয়ত ভাবতে চাচ্ছেন  লেখার নতুন কোন বিষয় নিয়ে কিন্তু কিছুতেই মাথা কাজ করছে না, মনে পড়ে যাচ্ছে এ সংশ্লিষ্ট আরো অনেক কথা। এক সময় হাল ছেড়ে দিলেন। নামাজ পড়তে গেলেন, নামাজ থেকে মন বন্ধুদের আড্ডায় চলে যাচ্ছে। কেন এমন হয়?
মন কী?: মন এমন এক বস্তু যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, ল্যবরেটরীতে টেস্টটিউবে ভরে পরীক্ষাও করা যায় না, তবে অনুভব করা যায়। একে আমরা আমাদের কম্পিউটারের সাথে তুলনা করে দেখতে পারি। কম্পিউটারের দুটো অংশ- হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার। হার্ডওয়্যার ধরা যায়, দেখা যায়, ছোঁয়া যায় কিন্তু সফটওয়্যার ? এর অস্তিত্ব আছে তবে ধরা ছোঁয়া যায় না। এটা না হলে কম্পিউটার চালানো ও যায় না। ঠিক তেমনি মন ও মানুষের সব কিছুর নিয়ন্তা। মনের ৩ টি অংশ আছে- ১. সচেতন মন ২. অবচেতন মন ৩. অচেতন মন।
মন কিভাবে কাজ করে?: আমরা সব সময় সচেতন মনের দ্বারা চালিত হই। এটি আমাদের সব কাজকে মনিটরিং করে যাতে কোন ভুল না হয়। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী হল অবচেতন মন। সচরাচর এর কাজ আমরা অনুভব করতে পারি না। কিন্তু আমরা যত কাজ করছি, যা কিছু দেখছি, যা বোঝার বা শেখার চেষ্টা করছি সব কিছু ব্যকআপ হয়ে থাকছে আমাদের মস্তিষ্কে এবং এ কাজটাই করে আমাদের অবচেতন মন। আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি অবচেতন মন জেগে ওঠে এবং তার কর্ম তৎপরতা শুরু করে। ব্যকআপে থাকা সকল তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে কাজের প্রেরণা দান করে, তথ্যগুলোকে মস্তিষ্কের স্থায়ী মেমেরিতে জমা করে। এভাবে আমরা যা দেখি বা যা কিছু চিন্তা করি সবই ঘুমের ঘোরে অবচেতন মন আমাদের মেমোরিতে ঢুকিয়ে দেয়। ফলে এগুলোর উপস্থিতি আমরা টের না পেলেও এগুলো আমাদের ব্যকগ্রাউন্ডে কাজ করতে থাকে। আর আমরা এভাবেই এলোপাথাড়ি চিন্তায় আচ্ছন্ন হই। একজন মনোবিচজ্ঞানী বলেছেন " তোমার স্মৃতিকে গোডাউনের মত যা তা দিয়ে ঠেসে রেখো না, কাজের গুলো জমা কর, অপ্রয়োজনীয় গুলো ফেলে দাও। আমরা যদি আমাদের অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রন করতে পারি তবে আমরা বুঝতে পারব মনের গভীরে কী ঘটছে।
কিভাবে করা যাবে?: এর জন্যে প্রয়োজন একাগ্রতা সৃষ্টি করা। একাগ্র মনোযোগ আমাদের স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে, কাজে সঠিক মনোযোগ প্রদানো সাহায্য করে। একাগ্র মনোযোগ সৃষ্টি করা তেমন সহজ কাজ নয়, এর জন্যে প্রয়োজন মানসিক অনুশীলন। এখানে আমি একটি ছোট কিন্তু কার্যকর অনুশীলনের নিয়ম বলব। এটির আবিষ্কর্তা বিখ্যাত মৌনি সাধু।
নিয়ম: ১.আপনার রুমে গিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসুন।
২. বেশি শব্দ হলে দরজা জানালা বন্ধ করে দিন।
৩. ঘরে ঝোলানো দেয়াল ঘড়ির সেকেন্ডের কাটার দিকে মনোযোগ দিন।
৪. পাকা ২ মিনিট ঘড়ির সেকেন্ডের কাটার দিকে তাকিয়ে থাকুন।
এ সময় এমন ভাবে থাকবেন যেন পৃথিবীতে শুধু ওই ঘড়ির কাঁটা ব্যতীত আর কিছু নেই। মনোযোগ যদি ঘড়ির কাঁটা থেকে সরে যায় তবে আলতো ভাবে মনোযোগ আবার ঘড়ির কাঁটায় ফিরিয়ে আনুন। আবার ২ মিনিট পূর্ণ করুন। প্রথম প্রথম মনোযোগ থাকতে চাইবে না তবে টানা অনুশীলন চালিয়ে গেলে সহজ হয়ে যাবে। আপনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করবেন আপনার স্মৃতিশক্তির ব্যপক উন্নতি হয়েছে। যাতে খুশি একাগ্র মনোযোগ দিতে পারছেন। কাব্য, সাহিত্য, গান, প্রযুক্তি যে বিষয়ে ইচ্ছা গভীর মনোযোগ প্রদান করতে পারছেন।
এটা যদি কষ্টকর হয় অর্থাৎ দেয়াল ঘড়ি না থাকলে বা রুমে সে সুযোগ না পাওয়া গেলে তবে আপনার প্রিয় কম্পিউটার ব্যবহার করেও করতে পারেন। একজন সাইট নির্মাতা এমন একটি সাইট তৈরী করেছেন যা আপনাকে ২ মিনিটের জন্যে পৃথিবী আলাদা করে দেবে। বারবার চর্চা করুন, আপনার স্মৃতি দেখে নিজেই অবাক হবেন।

রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অনলাইনে আয়ের নামে সাইবারক্রাইম - ক্লিক ফ্রডের ব্যাপক বিস্তার, আপনিও কি এতে জড়িত?

সাইবারক্রাইম নিয়ে কথা বলতে গেলেই চলে আসে ক্লিক ফ্রড (Click fraud) এর কথা। খুব নিম্নমানের ক্রাইমের তালিকায় প্রথমেই আসে এটা। বাংলাদেশে সাইবারক্রাইমের বিস্তার নিয়ে আগের দুই লেখায় লাইক ফ্রড ও ক্যাপচা সল্ভ সহ অন্যান্য ফ্রডের কথা লিখেছিলাম। কিন্তু খুব বেশি চালু ক্লিক ফ্রড এর সাথেও অনেকে জড়িত হয়ে পড়ছেন, তাই সেটা নিয়ে আজকে লিখছি।
ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেয়া যখন শুরু হয়, তখন সেটার বিল কিভাবে করা হবে তা নিয়ে অনেক সিস্টেম গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে খুব জনপ্রিয় হলো pay per click, অর্থাৎ বিজ্ঞাপন দাতা কোনো বিজ্ঞাপনে কয়বার ক্লিক করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে পয়সা দেন ওয়েবসাইট মালিককে। গুগলের এডসেন্স এভাবেই কাজ করে।
ক্লিক ফ্রড
অসাধু ওয়েবসাইট নির্মাতারা এটার সুযোগ নেয়। ভুয়া ক্লিক করে আদায় করে নেয় টাকা। কিন্তু বাংলাদেশের তরুণদের অনেকে এটাকে আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং হিসাবে ভেবে নিয়ে এসব অসাধু ব্যবসায়ীর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। নানা সময়ে নানা ব্লগে বা ফোরামে এই ব্যাপারে অনেককে প্রলোভন দেখাতে দেখেছি। কয়েকজনে মিলে গ্রুপ করে একে অন্যের সাইটের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করা তো মামুলি ব্যাপার, অনেকেই প্রতিষ্ঠিত ক্লিক-সাইটের সদস্য হন। সেখান থেকে প্রতিদিন কোন বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে হবে, তার তালিকা আসে, আর সেই অনুযায়ী ক্লিক করলে প্রতি ক্লিকে ১-২ সেন্ট বা বাংলাদেশের হিসাবে ১-২ টাকা জমে। নির্ধারিত অংক পেরুলে (যেমন ১০০ ডলার) সেই টাকা ফেরত নেয়ার সুযোগ থাকে।
এই কাজগুলা অভাবনীয় রকমের unproductive হলেও অনেকেই ঘরে বসে ইন্টারনেটে পয়সা কামানোর সুযোগ হিসাবে এটাকে লোভনীয় ভাবেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারে বসে ক্লিক করে চলেন বিজ্ঞাপনে, ক্লিক প্রতারণায় জড়িত মাফিয়াদের হয়ে জেনে বা না জেনেই কাজ করেন।
ইন্টারনেটের ১০-২০% ক্লিকই এরকম নকল ক্লিক!!
প্রশ্ন হলো - এর সমস্যা গুলা কোথায়? অনেকেই কুযুক্তি দেখান, এতে সমস্যা কোথায়, দেশে টাকা আসছে, আসুক, ইত্যাদি ইত্যাদি।
ভেবে দেখুন, ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, কক্সবাজার বিচে বিদেশী কাউকে দেখতে পেলেই তার টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে বা পকেট মেরে টাকা ভাগ করে নেয়ার মতো, সেটাতেও দেশে কিন্তু টাকা আসে!! ক্লিক করার জন্য কেউ তো আর এমনি এমনি টাকা দিবেনা, টাকাটা আসবে বিজ্ঞাপনদাতাকে ঠকিয়ে, ভুয়া ক্লিকের বিল করে।
আর এই ক্লিকফ্রডের মতো আনপ্রোডাকটিভ কাজে তরুণদের যে সময় নষ্ট হচ্ছে, সেটাও দেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি। ভুয়া ক্লিক করে করে ঘণ্টায় যে টাকাটা আয় করা সম্ভব, তা বেশ হাস্যকর রকমের কম। সেই সময়টা অন্য কোনো কাজে দিলে সম্ভব অনেক বেশি উপার্জন।
ইন্টারনেটে সৎভাবে আয় করে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করার সুযোগ অনেক আছে। ক্লিক ফ্রড, লাইক ফ্রড, বা ক্যাপচা ফ্রডে লেগে থাকার কোনো প্রয়োজন নাই, আর এসব সাইবারক্রাইমের সাথে জড়িত হয়ে নিজের ও দেশের জন্য সারা বিশ্বে কুখ্যাতি অর্জন করাটা আরো দুঃখজনক। আশা করি সবাই ইন্টারনেটে অর্থ উপার্জনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে ব্যাপারটা দুবার ভেবে দেখবেন, আর বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এরকম অপরাধের বিস্তার রোধে কাজ করবেন।